পাবনা প্রতিনিধিঃ পাবনার সাঁথিয়ায় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ, অশ্লীল গালাগাল ও হুমকি ধামকির অভিযোগ উঠেছে পৌর বিএনপির সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগপত্র পাঠিয়েছেন সাঁথিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি ( এসিল্যান্ড) রিফাতুল হক। এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনে কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে ব্যপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) অফিসে গত ২৪ সেপ্টেম্বর সকালে পরিদর্শনে আসেন ভূমি সংস্কার বোর্ডের ভূমি সংস্কার কমিশনার শ্রাবণী রায়। ঐ সময় সাঁথিয়া পৌর বিএনপির সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম অন্য এক ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধনের বয়স সংশোধনের কাজে ভূমি অফিসে আসেন এবং এসিল্যান্ডের রিফাতুল হকের সাক্ষাৎ চান। ভূমি সংস্কার কমিশনারের পরিদর্শনের দাপ্তরিক ব্যস্ততার বিষয়টি জানিয়ে অফিসের কর্মচারীরা তাকে পরে সাক্ষাতের অনুরোধ জানালে মিরাজুল ইসলাম ক্ষিপ্ত হয়ে জোর গলায় উদ্ধত আচরণ করতে থাকেন এবং কমিশনার উদ্দেশ্য করে করে প্রকাশ্যে গালাগালি,অবমাননাকর, অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। এ সময় ভূমি অফিসের কর্মচারীরা তাকে নিবৃত করতে এলে তাদেরকেও ভয়ভীতি এবং হুমকি ধামকি দেন তিনি। এ সময় বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
পরে, ভূমি সংস্কার কমিশনার অফিস ছেড়ে গেলে এসি ল্যান্ড রিফাতুল হক কৃষি প্রযুক্তি মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাবার সময় সিরাজুল ইসলাম সাক্ষাতের কথা জানান। এ সময় এসিল্যান্ড তাকে এক ঘন্টা পরে সময় দিলে তিনি ক্ষিপ্ত হন। এবং অবমাননাকর কুরুচিপূর্ণ গালাগাল করেন। এমন আচরণ প্রশাসনে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অন্তরায় জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে অবহিত করেছেন এসিল্যান্ড রিফাতুল হক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী জানান, সাঁথিয়া পৌর বিএনপির সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম সরকার পতনে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছেন। ৫ ই আগস্ট থেকে আপন ছোট ভাই উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মিরাজুল ইসলাম মল্লিককে সাথে নিয়ে পৌর এলাকার বিভিন্ন দোকান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীদের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করেছেন। আগামী পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হবার ঘোষণা দিয়ে তিনি পুরো পৌরসভা এলাকা সন্ত্রাসী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সে ধারাবাহিকতায় সরকারি বেসরকারী বিভিন্ন অফিসে পেশি শক্তির প্রদর্শন করেছেন বলেও জানান তারা।
সাঁথিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি রিফাতুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ঐদিন আমি ব্যস্ত থাকার কারনে সিরাজুল সাহেব কে এক ঘন্টা কথা বলতে চেয়েছিলাম এতেই সে উত্তেজিত হয়ে চিল্লাচিল্লি করতে থাকেন এবং কমিশনার কে লক্ষ্য করে জনসাধারণের সামনে গালাগালি,অবমাননাকর, অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। তবে তাহার এমন আচরন কখনই আশা করিনি। আমি জেলা প্রশাশক বরাবর ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের নানা দাপ্তরিক ব্যস্ততা থাকে। অভিযুক্ত রাজনৈতিক নেতা অসদাচারণ করেছেন। জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে, অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবী করেছেন অভিযুক্ত সাঁথিয়া পৌর বিএনপির সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ওইদিন ঘটনার পর আমাকে এসিল্যান্ড ডেকে নিয়েছিলো। আমি কোনরকম গালাগালি অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করি নাই। হুমকি দেয়ার প্রশ্নই ওঠেনা। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসের অভিযোগও কাল্পনিক।
এ বিষয়ে পাবনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এডভোকেট মাসুদ খন্দকার বলেন, সাঁথিয়ায় সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে অসদাচরণের কোন অভিযোগ আমার কাছে এখনো আসেনি। তবে, বিশৃংখলার বিরুদ্ধে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জিরো টলারেন্স অবস্থানে রয়েছেন। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে সরকার কি করবে সেটা পরের বিষয়, ঘটনার সত্যতা পেলে আমরা কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।